স্বদেশ ডেস্ক:
জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধি, কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রধান অঙ্গসংগঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে সংস্থাটিতে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করছে চীন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশেষজ্ঞদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গেট হাউজ’র সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের একটি চীন। সংস্থাটিতে এসব সদস্য দেশ চাঁদা প্রদান করে থাকে। গবেষণায় উঠে এসেছে, চীন এই চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের প্রভাব বাড়াচ্ছে। যেমন- সংস্থাটিতে ২০১০ সালে চীন চাঁদা দেয় ১৯০ মিলিয়ন ডলার। নয় বছর পর ২০১৯ সালে চাঁদা দেয় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে অর্থাৎ ২০১০ সালে ভারত চাঁদা দেয় ৮৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯ সালে দেয় ১৩২ মিলিয়ন ডলার।
জাতিসংঘের প্রধান ছয়টি অঙ্গের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদ অন্যতম। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটি কাজ করে। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জাতিসংঘে চীনের বাধ্যতামূলক চাঁদা ১ হাজার ৯৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময়ে স্বেচ্ছায় প্রদানকৃত চাঁদার পরিমাণ বাড়ে ৩৪৬ গুন।
পাঁচটি দেশের বাধ্যতামূলক মোট চাঁদার ১২ শতাংশই প্রদান করে চীন। এই চাঁদা প্রদানের দিক থেকে চীনের অবস্থান দ্বিতীয় অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পরই এর অবস্থান।
থিংক ট্যাঙ্ক গেট হাউজের সমীক্ষায় দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোতে চীন প্রধান কিংবা ডেপুটি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ), ইউনাইটেড নেশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইউএনআইডিও), ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশন (আইসিএও) , ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন (এফএও) এবং ইন্ট্যারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশন (আইএমও)। এই চারটি সংস্থার (এফএও, ইউএনআইডিও, আইসিএও, আইটিইউ) ১৫টি প্রধান এজেন্সিরও সরাসরি প্রধান চীন।
এ ছাড়া জাতিসংঘের যেসব প্রতিষ্ঠানে চীন কোনো পদ দখল করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’র (বিআরআই) জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। তিনটি চুক্তির কথা উল্লেখ করে সমীক্ষায় বলা হয়, ‘চীনের বিদেশ নীতির এজেন্ডা জাতিসংঘের মাধ্যমেই অনুমোদন পাচ্ছে এবং অনুসমর্থিত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালের মে মাসে আইসিএও’র সেক্রেটারি জেনারেল ফ্যাং লিউ চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যেখানে চীনা সরকার আইসিএও’র প্রকল্পের জন্য ৪ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নিরাপদ বিমান পরিবহনের নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য। সমীক্ষা একে বিআরআই-তে চীনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখছে।
ভারত কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে সমীক্ষা সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতকে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় আরও নিয়োজিত হতে হবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিরও জাতিসংঘে স্বেচ্ছাসেবী অবদান বাড়াতে হবে এবং কৌশলগতভাবে নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হবে।
সূত্র : দ্য প্রিন্ট